২৪ বছরের বড় শিক্ষিকার সঙ্গে ১৫ বছর বয়সে প্রেম, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর বিয়ের আসল গল্প - President Macron's marriage - BD Today Viral

এইমাত্র

Post Top Ad

Post Top Ad

মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫

২৪ বছরের বড় শিক্ষিকার সঙ্গে ১৫ বছর বয়সে প্রেম, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর বিয়ের আসল গল্প - President Macron's marriage

French_President_Emmanuel_Macron's_Wedding

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর প্রেমকাহিনী বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি প্রেমে পড়েন তার ২৪ বছরের বড় নাটকের শিক্ষিকা ব্রিজিতের। এই সম্পর্ক শুরু হয় ১৯৯৩ সালে, যখন ব্রিজিত ছিলেন বিবাহিত ও তিন সন্তানের মা। সমাজের নানা বাধা ও সমালোচনার মুখেও তারা ভালোবাসাকে অটুট রেখেছেন। ২০০৭ সালে, ব্রিজিতের বিবাহবিচ্ছেদের পর, তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই ভিডিওতে তাদের প্রেমের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত যাত্রা তুলে ধরা হয়েছে।

 

অসম বিয়ে সমাজে স্বীকৃত নয়- এটি একটি আপেক্ষিক বিষয়। তবে তা নিষিদ্ধ ও নয়। মানুষ যে কোনো সময় যে কারো প্রেম পড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বয়স বিবেচনা করে কেউ প্রেমে পড়েনা। হয়তো কেউ কেউ নিজেকে ফিরিয়ে নিতে পারলেও অনেকেই পারেনা। স্বামী বয়সে অনেক বড় হতে হবে এটা স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। যত বড় হউক সমস্যা নেই, কিন্তু স্ত্রী বড় হলেই যত বিপত্তি । এক্ষেত্রে একটি দিকে কেউ নজর দেয়না যে তারা দাম্পত্য জীবনে সুখি নাকি অসুখি। এতক্ষণ কথা গুলো অন্য একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে বললাম। সম্প্রতি একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যাতে দেখা যাচ্ছে- প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর গালে থাপ্পর দিচ্ছে কোন নারী যা স্পষ্ট নয়। সেই নারী তা স্ত্রী ব্রিজিত! হতে পারে বিষয়টি অন্য রকম কিন্তু প্রকাশ পেয়েছে অন্যভাবে। তাই তাদের নিয়ে আজকের খুঁটিনাটি আলোচনা ...


ব্রিজিত মাখোঁর চেয়ে বয়সে ২৪ বছর বড়। তাঁদের প্রথম দেখা হয় ফ্রান্সের আমিয়েঁ শহরের একটি বেসরকারি কলেজেযেখানে ব্রিজিত ছিলেন ফরাসি ভাষার শিক্ষক আর মাখোঁ ছিলেন ছাত্র। তখন ব্রিজিত শহরের অভিজাত এলাকায় থাকতেন। তাঁর পরিবার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির ব্যবসার জন্য পরিচিত ছিল। তিনি তখন বিবাহিত ছিলেন, স্বামী ছিলেন নামকরা ব্যাংকার আন্দ্রে-লুই ওজিয়ের। লেখক বোমেল তাঁকে একজননির্ভরযোগ্য কিন্তু একঘেয়েমানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের সংসারে ছিল তিনটি সন্তান। বোমেল বলেন, ‘আমার মনে হয় না ব্রিজিত তাঁর সঙ্গে অখুশি ছিলেন। তাঁর জীবন ছিল নির্ঝঞ্ঝাট গোছানো। কিন্তু হঠাৎ করেই মাখোঁর সঙ্গে এই সম্পর্কটা তাঁর জীবনে চলে আসে।

 

তাঁদের সম্পর্কের শুরু ১৯৯৪ সালের বসন্তে। তখন মাখোঁর বয়স ছিল ১৬ বছর, আর ব্রিজিতের ৪০। দুজনে মিলে একটি নাটক নতুনভাবে সাজিয়েছিলেন, যাতে দলের সবাইকে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া যায়। বোমেল বলেন, ‘কমপক্ষে তখন থেকেই মানুষ তাঁদের একসঙ্গে হাত ধরে হাঁটতে দেখত।

 

এই সম্পর্ক আমিয়েঁ শহরের ক্যাথলিক মধ্যবিত্ত সমাজ ভালোভাবে নেয়নি।

 

ব্রিজিত এমানুয়েল মাখোঁর সম্পর্কের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলোএটি সত্যি। ফ্রান্সে বহু প্রেসিডেন্ট পরকীয়ায় জড়িয়েছেন, তাই অনেকে অবাক হন যখন শোনেন, কিশোর বয়স থেকেই মাখোঁ একনিষ্ঠভাবে ব্রিজিতকে ভালোবেসেছেন এবং সবসময় তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন। অথচ ব্রিজিত মাখোঁর নতুন জীবনী বলছে, যতই অস্বাভাবিক মনে হোকএই বিয়েটিই ফ্রান্সের রাজনীতিতে অন্যতম স্থির দাম্পত্য সম্পর্ক, আর দেশের নেতৃত্বে আছেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি নিজের কাজে পুরোপুরি নিবেদিত।

 

ইল ভনেই দাভোয়ার ডিজ-সেত আন (তাঁর বয়স তখন সবে সতেরো) বইয়ের লেখক, ফরাসি সাংবাদিক সিলভি বোমেল মনে করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কেলেঙ্কারি বা বিতর্ক ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টদের পদকে অনেক সময় হাস্যকর বা নাটকীয় করে তুলেছে। কিন্তু ৪১ বছর বয়সী মাখোঁ এসব কিছুতে প্রভাবিত হননি।সিলভি বোমেলের লেখা বইটি সম্প্রতি ফ্রান্সে প্রকাশিত হয়েছে, যার জন্য পাঠকেরা অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। কারণ, এতে একসাধারণ প্রেমকাহিনিবিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, যার শুরু মাখোঁর স্কুলজীবনে। যেই স্কুলে মাখোঁ ছাত্র ছিলেন, সেখানেই শিক্ষকতা করতেন ব্রিজিতযিনি পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রী হন।

 

বইটিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে থাকা মাখোঁ যখন ব্রিজিতের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান, তখন তাঁকে নানা বিরোধিতা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এক কিশোর ছেলের সঙ্গে তাঁকে দেখলে স্থানীয় সমাজে নানা সন্দেহ আর গুঞ্জন ছড়াতে থাকে। তাঁর আত্মীয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন এই সম্পর্ক নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। কিন্তু এই সম্পর্ককে বিয়েতে রূপ দিতে মাখোঁ যে জেদ দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন ৬৩ বছর বয়সী লেখিকা।১০ বছরের বেশি সময় ধরে মাখোঁ ব্রিজিত একে অপরের প্রতি অনুগত ছিলেন, যদিও একসঙ্গে থাকতেন না।

 

স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক চিঠি আসে, যেগুলোর বেশির ভাগই ছিল বেনামি এবং তাতে শিক্ষিকা ব্রিজিতের আচরণকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করা হয়। এমনকি ব্রিজিতের পরিবারের কাছেও একই ধরনের কটূ বিরূপ চিঠি পাঠানো হয়েছিল। মাখোঁর মাবাবাও সরাসরি ব্রিজিতকে বলেন, যেন তিনি তাঁদের ছেলেকে ছেড়ে দেন।

 

আইন অনুযায়ী, মাখোঁর মাবাবা চাইলে বিষয়টি কৌঁসুলিকে জানাতে পারতেন এবং তা থেকে একটি তদন্তও শুরু হতে পারত। কারণ, ফরাসি আইনে কেউ যদি কর্তৃত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে কোনো নাবালকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে, সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।তবে বাস্তবে মাখোঁর মাবাবা, স্কুলের কর্তৃপক্ষ বা অন্য কেউই নিয়ে কোনো তদন্ত চাননি। এমনকি তাঁরা এটা জানার চেষ্টাও করেননি যে, ব্রিজিত আর মাখোঁর সম্পর্ক কেবল হাত ধরা পর্যন্ত ছিল কিনা। এই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত, মাবাবা মাখোঁকে প্যারিসে পাঠিয়ে দেন এই ভেবে যে সময়ের সঙ্গে এই সম্পর্ক নিজে থেকেই শেষ হয়ে যাবে।

 

কিন্তু তা হয়নি। মাখোঁ সম্পর্কটা ভাঙেননি, বরং পড়াশোনা চালিয়ে যান। তিনি ফ্রান্সের এক শীর্ষস্থানীয় কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেনএকটি এমন প্রতিষ্ঠান, যা ১৯৪৫ সাল থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় অভিজাত নেতৃত্বস্থানীয় মানুষ তৈরি করে আসছে।

 

২০০৬ সালে তাঁর স্বামী আন্দ্রে-লুই ওজিয়ে সাথে  বিবাহবিচ্ছেদ হয় এবং এর এক বছর পর ২০০৭ সালে ব্রিজিত মাখোঁকে বিয়ে করেন।


প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে থাকা মাখোঁর সঙ্গে যখন ব্রিজিতের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন তাঁকে নানা বিরোধিতা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

 

ব্রিজিতের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সম্পর্কের শুরুর দিকে তিনি অনেক ধিক্কার সামাজিক বর্জনের শিকার হন এবং এখনো মাঝে মাঝে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। যদিও অনেক ভোটার তাঁর সাহসিকতার প্রশংসা করেনকারণ, তিনি নিজের চেয়ে দুই দশকের বেশি ছোট একজন পুরুষকে বিয়ে করেছেন। তবে অনেকে তাঁকে অপছন্দও করেন, কারণ তিনি ফরাসি সামাজিক রীতি ভেঙেছেন, যেখানে সাধারণভাবে নারীরা নিজের চেয়ে বয়সে বড় পুরুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেন।

 

 মাখোঁ তো ব্রিজিতের নিজের সন্তানের চেয়েও ছোটএটাই অনেকের মনে এক ধরনের অবচেতনের অস্বস্তি তৈরি করে। কারণ, কেউ যদি এমন একজন ছেলের সঙ্গে প্রেম করেন, যিনি তাঁর নিজের ছেলের চেয়েও ছোট, তখন অনেকেই মনে মনে ভাবেন, তো নিজের ছেলের সঙ্গেও প্রেম করার মতো ব্যাপার। এটাই এই সম্পর্ককে ঘিরে একটা অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করে, যা মানুষকে নাড়া দেয়।

 

অনেকেই বলেন, এই জুটি বিকৃত মানসিকতার। এমনকি কেউ কেউ তো বিশ্বাসই করেন না, তাঁরা সত্যিই একসঙ্গে থাকেন।, আমাদের সমাজের একটা অংশ এখনো এমন ধরনের বৈচিত্র্যময় বৈবাহিক সম্পর্ক মেনে নিতে প্রস্তুত নয়।


এই মানসিকতাই হয়তো সেই সব গুজবের পেছনে রয়েছে, যেগুলো ছড়াতে শুরু করে ২০১৪ সালে, যখন মাখোঁ অর্থমন্ত্রী হন। একটি গুজবে বলা হয়, মাখোঁ সমকামী। আরেকটি গুজবে দাবি করা হয়, তাঁর স্ত্রী আজীবন তরুণ ছেলেদের প্রেমে পড়েছেন।

 

বোমেলের দীর্ঘ গভীর গবেষণায় এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি যে ইলিসি প্রাসাদে কোথাও কোনো গোপন সমকামী প্রেমিক আছেন, বা কোথাও লুকানো কোনোখেলনা বালকরয়েছে। বরং তিনি নিশ্চিত, গত ৫০ বছরে এই প্রথম ফ্রান্স এমন একজন প্রেসিডেন্ট পেয়েছে, যিনি সত্যিই একটি সুখী দাম্পত্য জীবনে আছেন।

 

মাখোঁকে ঘিরে আরেকটি গুজব রয়েছেতিনি নাকি যৌনতার প্রতি আগ্রহহীন।কেননা অর্থ মন্ত্রণালয়ে কাজ করার সময় মাখোঁর মধ্যে তরুণীদের প্রতি কোনো আকর্ষণ দেখা যায়নি, যা সেখানে কাজ করা অধিকাংশ পুরুষের মধ্যে সাধারণ বিষয় ছিল।তবে কেউ নিশ্চিত নন, মাখোঁ কি স্ত্রীর প্রতি এতটাই নিবেদিত যে অন্য কারও দিকে তাকানোর প্রয়োজনই অনুভব করেন না, নাকি সত্যিই তাঁর মধ্যে যৌন আকর্ষণের ঘাটতি রয়েছে।

 

তবে মাখোঁ একেবারেই আলাদানির্মল, নিয়ন্ত্রিত এবং কেলেঙ্কারিমুক্ত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

Post Top Ad