বাবাকে নজরবন্দি, ভাইদের আটক, এবং রাজপরিবারের শীর্ষ সদস্যদের
কোণঠাসা করে সৌদি আরবের রাজনীতিতে এক অনন্য ক্ষমতাশালী নেতা হয়ে ওঠেন মোহাম্মদ বিন
সালমান। যিনি একদিকে সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত, অন্যদিকে এক অটল স্বৈরাচারী
ক্ষমতার প্রতীক হিসেবেও বিশ্বে আলোচিত। আজকের এই ভিডিওতে আমরা জানব কিভাবে সৌদি রাজতন্ত্রের
জটিল খেলায় তিনি হয়ে উঠলেন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব।
সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রগুলোর একটি। তেলের
বিপুল ভাণ্ডার আর ইসলামের দুই পবিত্র নগর মক্কা-মদিনাকে ঘিরে এই রাজতন্ত্র শত বছর ধরে
টিকে আছে। এখানে ক্ষমতা সবসময় আল-সৌদ রাজপরিবারের হাতে। মোহাম্মদ বিন সালমান, যাকে
সবাই সংক্ষেপে বলে MBS, জন্ম নেন ১৯৮৫ সালে। তিনি রাজা সালমান বিন আবদুল আজিজের ছেলে।
শৈশব থেকেই রাজপ্রাসাদের ভেতরে রাজনীতির খুঁটিনাটি দেখতে দেখতে বড় হন। যদিও তার আগে
রাজপরিবারে আরও প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজপুত্র ছিলেন, তবে MBS ছিলেন উচ্চাভিলাষী এবং একেবারে
অন্যরকম চিন্তাধারার অধিকারী।
২০১৫ সালে রাজা সালমান ক্ষমতায় আসার পর, হঠাৎ করেই সামনে চলে
আসেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন মাত্র ২৯ বছর বয়সে।
কিছুদিনের মধ্যেই তাকে ‘ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স’ বানানো হয়, যা
রাজপরিবারে বিরল ঘটনা। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, রাজা সালমান তার ছেলেকে ভবিষ্যতের রাজা
হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন।তবে এর পেছনে আরেকটি বড় কৌশল ছিল—প্রতিদ্বন্দ্বী রাজপুত্রদের
ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়া। কারণ সৌদি আরবের রাজনীতিতে সবসময় রাজপুত্রদের মধ্যে ক্ষমতার
দ্বন্দ্ব চলে।
২০১৭ সালে ঘটে সৌদি আরবের ইতিহাসে অন্যতম নাটকীয় ঘটনা। এক রাতে
রাজপরিবারের বহু প্রভাবশালী প্রিন্স, ব্যবসায়ী আর মন্ত্রীদের আটক করা হয় রিয়াদের বিলাসবহুল
রিটজ-কার্লটন হোটেলে।
সরকারি ভাবে একে বলা হয়েছিল ‘অ্যান্টি-করাপশন ক্যাম্পেইন’। কিন্তু
বিশ্লেষকরা বললেন, এটি আসলে ছিল ক্ষমতার খেলা।
এই অভিযানে আটক হন সৌদি আরবের অন্যতম ধনী ব্যক্তি প্রিন্স আলওয়ালিদ
বিন তালালও। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজপরিবারের ভেতর থেকে MBS তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের
সম্পূর্ণভাবে দমন করেন।
রাজা সালমান বয়সে প্রবীণ এবং অসুস্থ। তাই কার্যত সব সিদ্ধান্ত
নিতে শুরু করেন মোহাম্মদ বিন সালমান। অনেক সময় শোনা যায়, তিনি বাবাকে আলাদা করে রাখেন
এবং বাইরের যোগাযোগ সীমিত করেন।
এর ফলে পুরো রাজপ্রাসাদে একক নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয় MBS-এর হাতে। অন্য ভাইদেরও ধীরে ধীরে আটক বা গৃহবন্দি করে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার সব পথ বন্ধ করে দেন।
MBS ক্ষমতায় আসার পর সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতিও পাল্টে যায়।
ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দেশটি, যা এখনো চলমান।এছাড়া কাতারের
সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব। আবার একদিকে আমেরিকা ও পশ্চিমাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক
গড়তে থাকেন, বিশেষত ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড,
যেখানে আন্তর্জাতিক মহল সরাসরি মোহাম্মদ বিন সালমানকে অভিযুক্ত করে। যদিও তিনি অস্বীকার
করেন, তবুও তার ইমেজে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে।
তবে MBS কেবল শক্ত হাতে শাসনেই থেমে থাকেননি। তিনি চালু করেন
‘ভিশন ২০৩০’, যার মাধ্যমে সৌদি আরবকে তেলের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করার স্বপ্ন
দেখান।
দেশে বিনোদন খাত চালু করা, পর্যটন খোলা, নারীদের গাড়ি চালানোর
অনুমতি দেওয়া এসব সংস্কারমূলক কাজও তার নেতৃত্বেই সম্ভব হয়।
তবে সমালোচকেরা বলেন, এসব সংস্কারের আড়ালে তিনি কঠোরভাবে মতপ্রকাশের
স্বাধীনতা দমন করছেন।
আজ সৌদি আরবের কার্যত শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান। তার সিদ্ধান্তেই
দেশ চলে। তিনি একদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে আধুনিক নেতৃত্বের প্রতীক, অন্যদিকে ভিন্নমতাবলম্বীদের
কাছে ভয়ঙ্কর এক স্বৈরশাসক।
বাবাকে নজরবন্দি করে, ভাইদের ও আত্মীয়দের আটক করে তিনি যেভাবে রাজপরিবারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন, তাতে বোঝা যায় সৌদি রাজনীতিতে এখন একটাই নাম সবচেয়ে প্রভাবশালী মোহাম্মদ বিন সালমান।
আপনারা কিভাবে দেখেন মোহাম্মদ বিন সালমানকে? সংস্কারক নেতা, নাকি একনায়ক শাসক? কমেন্টে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।
🔖 ট্যাগ-
#SaudiArabia #MohammedBinSalman #MBS #SaudiCrownPrince
#SaudiRoyalFamily #Vision2030 #MiddleEastPolitics #SaudiArabiaHistory
#WorldPolitics #PowerStruggle
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন