পাকিস্তান ও ইসরায়েলের সম্পর্ক বহু দশক ধরে তিক্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই উত্তেজনা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে যখন খবর ছড়িয়ে পড়ে- ইসরায়েল পাকিস্তানের একটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনার ঝড়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের পতাকাবাহী একটি বাণিজ্যিক জাহাজ মধ্যপ্রাচ্যের জলে চলাচলের সময় হঠাৎ আক্রমণের মুখে পড়ে। সন্দেহ করা হচ্ছে, ড্রোন অথবা মিসাইল হামলার মাধ্যমেই এই আঘাত হানা হয়। যদিও ইসরায়েল সরাসরি দায় স্বীকার করেনি, তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হামলার ধরন ও কৌশল ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সঙ্গে মিলে যায়।
এই হামলার ফলে পাকিস্তানের বৈদেশিক নৌ-বাণিজ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কঠোর ভাষায় এই ঘটনাকে নিন্দা জানিয়ে বলেছে- আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন লঙ্ঘন করে এমন আগ্রাসী কার্যকলাপ মেনে নেওয়া হবে না। তারা জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না এলেও, দেশটির প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, পাকিস্তানের কিছু কার্যকলাপকে তারা "নিরাপত্তার জন্য হুমকি" মনে করে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে পাকিস্তানের অবস্থান, ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, এবং হামাসসহ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রতি নীতিগত সমর্থন ইসরায়েলের কৌশলগত অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলেছে।এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও তীব্র হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ইসরায়েলকে এই ধরনের আক্রমণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের নীরবতা অনেককে বিস্মিত করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইসরায়েলের পদক্ষেপকে নীরবে সমর্থন দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানও থেমে নেই। তাদের নৌবাহিনীকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে কোনো আক্রমণ প্রতিহত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানি গণমাধ্যমে আলোচনায় উঠে এসেছে, যদি ইসরায়েলের এই ধরনের আক্রমণ অব্যাহত থাকে, তবে সেটি বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের দিকে গড়াতে পারে। এই হামলার পেছনে ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা স্পষ্ট। ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে তার আধিপত্য বজায় রাখতে চাইছে, আর পাকিস্তান ঐতিহ্যগতভাবে মুসলিম বিশ্বের পক্ষে কণ্ঠস্বর হয়ে আসছে।
তাই দুই দেশের মধ্যে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ না থাকলেও, কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছেই। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, যদি এই দ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তা শুধু পাকিস্তান ও ইসরায়েল নয়, বরং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন