দুর্গাপূজা শুধু একটি উৎসব নয়, এটি হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক গভীর প্রতিচ্ছবি। কিন্তু জানেন কি, কীভাবে এই পূজা ধীরে ধীরে হয়ে উঠলো ভারতের এবং বাঙালির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব?
হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা! আজ এটি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি এখন বাংলার সংস্কৃতি, শিল্প, আর অনুভূতির মিলনমেলা। কিন্তু জানেন কি? একসময় এই পূজা ছিল শুধুই রাজবাড়ি আর জমিদারদের ঘেরাটোপে বন্দী। তাহলে কীভাবে এই দুর্গাপূজা হয়ে উঠলো সর্বজনীন উৎসব?
দুর্গাপূজার শিকড় পাওয়া যায় প্রাচীন ভারতের ‘দেবী মহাত্ম্য’গ্রন্থে, যেখানে দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের কাহিনি বর্ণিত। তবে বাংলায় দুর্গাপূজার প্রাতিষ্ঠানিক সূচনা হয় ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে, যখন রাজা কংস নারায়ণ প্রথমবার রাজবাড়িতে দেবী দুর্গার পূজা আয়োজন করেন। সেই সময় পূজা ছিল রাজকীয় আয়োজন- মৃৎপ্রতিমা তৈরি, ব্রাহ্মণদের দ্বারা বেদ পাঠ, আর সমাজের উচ্চবর্গের জমকালো অংশগ্রহণ। কিন্তু সাধারণ মানুষ তখনো দূর থেকে এই মহোৎসব দেখতো, অংশ নিতে পারতো না। আঠারো শতকে এই চিত্র বদলাতে শুরু করে।
ব্রিটিশ শাসনামলে কলকাতার নবাবিপ্রিয় ধনীরা দুর্গাপূজাকে সমাজে নিজেদের মর্যাদা দেখানোর এক মাধ্যম বানান। “বারোয়ারি পূজা” বা “সর্বজনীন দুর্গাপূজা”র সূচনা হয় ১৭৯০ সালের দিকে, যখন কয়েকজন বন্ধু একত্র হয়ে সামষ্টিকভাবে পূজা আয়োজন করেন। এখান থেকেই শুরু হয় জনমানুষের পূজা, সবাই মিলে দেবীকে আহ্বান করা, আনন্দ ভাগ করে নেওয়া।
উনিশ ও বিশ শতকে দুর্গাপূজা হয়ে ওঠে বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। এই সময় কবি, শিল্পী, সংগীতজ্ঞরা পূজাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি করতে থাকেন গান, নাটক, কবিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে কাজী নজরুল ইসলাম- সবাই তাঁদের সৃষ্টিতে দুর্গার শক্তি আর মাতৃত্বের মহিমা তুলে ধরেছেন।
স্বাধীনতার পর দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মিলনের বন্ধন হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গে, ধর্মের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই উৎসব ছুঁয়ে যায় সব মনকে। এখন দুর্গাপূজা মানে সাজসজ্জা, প্যান্ডেল, আর প্রতিমা নয় এটি একসাথে বাঁচার আনন্দ, সংস্কৃতির ঐক্যের প্রতীক।
দেবী দুর্গা যেন শুধু অসুর বধের প্রতীক নন, তিনি শক্তি, মাতৃত্ব, ঐক্য আর আশার প্রতীক। তাই তো, দুর্গাপূজা আজ বাংলার হৃদয়ে, ধর্মের সীমা ছাড়িয়ে, হয়ে উঠেছে হিন্দুদের আত্মার উৎসব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন