
আল আকসা মসজিদ, এটি শুধু একটি উপাসনালয়
নয়, বরং এক হাজার
বছরের ইতিহাস, বিশ্বাস ও সংগ্রামের প্রতীক। আজ এই
স্থানটিই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু প্রশ্ন
হলো, কীভাবে এই পবিত্র
স্থানটি পরিণত হলো রাজনৈতিক
উত্তেজনা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের
মূলে? জেরুজালেম শহরের পুরোনো প্রাচীরঘেরা
অংশে অবস্থিত আল আকসা মসজিদ
ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্র
স্থান।
মুসলমানদের বিশ্বাস,
এখান থেকেই নবী মুহাম্মদ
ﷺ মিরাজে গমন করেছিলেন, আকাশে যাত্রা করেছিলেন
আল্লাহর সাক্ষাতে। সেই কারণেই
এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য
এক গভীর আত্মিক মর্যাদার
প্রতীক। কিন্তু এই
জায়গাটি কেবল মুসলমানদের জন্যই
নয়, ইহুদি ধর্মের অনুসারীরাও
মনে করে- এখানেই ছিল তাদের
প্রাচীন মন্দির “Temple Mount”। তারা বিশ্বাস
করে, এটি ছিল নবী
সোলাইমানের নির্মিত পবিত্র মন্দিরের স্থান। আর সেখান
থেকেই শুরু হয়েছে ধর্মীয়
মালিকানার দ্বন্দ্ব।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জেরুজালেম নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পূর্ব জেরুজালেম, যেখানে আল আকসা মসজিদ অবস্থিত, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল দখল করে নেয়। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে এটি ফিলিস্তিনের অংশ হিসেবে স্বীকৃত, তবু বাস্তবে ইসরায়েল সেই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে।
ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ- ইসরায়েল আল আকসার প্রাঙ্গণে নিয়মিত হামলা চালায়, নামাজে বাধা দেয়, এমনকি ধীরে ধীরে মসজিদের নিচে খননকাজ চালিয়ে সেটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল দাবি করে তারা কেবল “নিরাপত্তা রক্ষায়” এমন পদক্ষেপ নেয়। প্রতিবার যখন ইসরায়েলি বাহিনী মসজিদে অভিযান চালায় বা ইহুদি চরমপন্থীরা সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করে, পুরো মুসলিম বিশ্ব জেগে ওঠে প্রতিবাদে। আল আকসার অবমাননা মানে যেন পুরো মুসলিম জাতির হৃদয়ে আঘাত। এই এক টুকরো ভূমি আজ যেন এক প্রতীকে পরিণত- যেখানে মিলেছে ধর্ম, রাজনীতি আর অস্তিত্বের লড়াই।
ফিলিস্তিনিরা বলে, “যে আল আকসাকে রক্ষা করবে, সে জেরুজালেমকে রক্ষা করবে” আর ইসরায়েলের জন্য, জেরুজালেমের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণই তাদের জাতীয় গর্বের প্রশ্ন। এভাবেই আল আকসা শুধু একটি মসজিদ নয়, এটি এখন হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির স্পন্দন, যেখানে প্রতিটি ইটের নিচে লুকিয়ে আছে ইতিহাস, বিশ্বাস, আর অনন্ত সংগ্রামের কাহিনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন