পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা কেন বাংলাদেশ থেকে আলাদা হতে চায়? Chittagong Hill Tracts - BD Today Viral

এইমাত্র

Post Top Ad

Post Top Ad

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা কেন বাংলাদেশ থেকে আলাদা হতে চায়? Chittagong Hill Tracts

পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এক বিশেষ ভূখণ্ড হলো চট্টগ্রাম পাহাড়, নদী আর সমুদ্রঘেরা এই অঞ্চল শুধু ভৌগোলিক সৌন্দর্যেই নয়, জাতিগত বৈচিত্র্যের জন্যও অনন্য কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেচট্টগ্রামের কিছু জাতিগোষ্ঠী কেন বারবার আলাদা হওয়ার দাবি তোলে? এর ইতিহাস, কারণ এবং প্রভাব নিয়েই আজকের আলোচনা” চট্টগ্রাম, বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, বাংলাদেশের এক ব্যতিক্রমী স্থান এখানে বসবাস করে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, খিয়াং, বম, লুসাইসহ প্রায় ১১টিরও বেশি আদিবাসী জনগোষ্ঠী


এরা নিজেদের সংস্কৃতি, ভাষা, পোশাক, ধর্মীয় রীতি ঐতিহ্যের মাধ্যমে মূলধারার বাঙালি সমাজ থেকে আলাদা এই পার্থক্য থেকেই তাদের মধ্যে স্বকীয়তা রক্ষার প্রবল মানসিকতা তৈরি হয়েছে” “বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলেও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় আনার জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বরং পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের কারণে প্রায় ৫০ হাজার পাহাড়ি মানুষ গৃহহীন হয়ে যায় হাজার হাজার একর জমি পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে তারা চরম ক্ষতির শিকার হয় এর ফলে সরকারের প্রতি তাদের আস্থাহীনতা বাড়ে


১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ভেবেছিল নতুন রাষ্ট্রে তারা সমান অধিকার পাবে কিন্তু সংবিধানে তাদের আলাদা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি ফলে অসন্তোষ শুরু হয় অসন্তোষ থেকেই গড়ে ওঠে পাহাড়ি রাজনৈতিক সংগঠনপার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিবা জেএসএস, যাদের সশস্ত্র শাখাশান্তিবাহিনীদীর্ঘদিন বিদ্রোহ পরিচালনা করে


চট্টগ্রামের জাতিগোষ্ঠীগুলো কেন বাংলাদেশ থেকে আলাদা হওয়ার দাবি তুলেছিল, তার পেছনে কয়েকটি বড় কারণ রয়েছে-


জাতিগত পরিচয় সাংস্কৃতিক বৈষম্যতারা মনে করে, মূলধারার বাঙালি সমাজে তাদের সংস্কৃতি উপেক্ষিত

ভূমি অধিকার নিয়ে বিরোধপাহাড়ি জমিতে বাঙালি বসতি স্থাপনকে তারা নিজেদের অস্তিত্বের হুমকি মনে করে

রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে বঞ্চনাপ্রশাসন, শিক্ষা বা চাকরিতে তাদের প্রতিনিধিত্ব খুবই সীমিত ছিল

অর্থনৈতিক বৈষম্যপর্যাপ্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা বা অবকাঠামো না থাকায় তারা দীর্ঘদিন পিছিয়ে থেকেছে

নিরাপত্তা ইস্যুসেনা শাসন এবং বিভিন্ন সময়ের সংঘাত তাদের মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস তৈরি করে


১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সরকারের সময় পাহাড়ি বিদ্রোহীদের সঙ্গে ঐতিহাসিকচট্টগ্রাম শান্তিচুক্তিস্বাক্ষরিত হয় এতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়ভূমি কমিশন গঠন, পাহাড়িদের সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষা, সেনা ক্যাম্প কমানো এবং প্রশাসনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার এই চুক্তি বিদ্রোহ কমাতে বড় ভূমিকা রাখলেও অনেক শর্ত এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি তাই এখনও ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করছে


বর্তমানে আলাদা রাষ্ট্রের দাবি তেমন জোরালো না থাকলেও পাহাড়িদের মধ্যেস্বশাসনবাআঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনচাওয়ার প্রবণতা রয়েছে তারা মনে করে, নিজেরাই নিজেদের অঞ্চলের উন্নয়ন প্রশাসন চালাতে পারলেই তাদের সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষিত হবে অন্যদিকে সরকার বলে, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সবাইকে বাংলাদেশের পরিচয়ের ছাতার নিচে থাকতে হবে


চট্টগ্রামের জাতিগোষ্ঠীগুলোর আলাদা হওয়ার দাবি মূলত এসেছে ইতিহাস, বৈষম্য আর রাজনৈতিক বঞ্চনা থেকে তবে বাস্তবতা হলোএই পাহাড়-নদী-সমুদ্রঘেরা অঞ্চল বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ তাই তাদের সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো সংলাপ, উন্নয়ন, এবং তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সম্মান জানানো তাহলেই চট্টগ্রাম সত্যিকার অর্থে শান্তি সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারবে


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

Post Top Ad