গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলছে নতুন জট! ইসরায়েল জানিয়েছে- গাজা থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করা হবে না, আর এই মুহূর্তে মার্কিন সেনা দল প্রবেশ করছে মিশনে। গাজা থেকে পুরো সেনা প্রত্যাহার হবে না, এবং মার্কিন সেনাদলের গাজায় প্রবেশ বিষয়ে বিস্তারিত।
গত কয়েক বছর ধরে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে গাজা অঞ্চলে সশস্ত্র সংঘর্ষ চলছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা ও পরে ইসরাইলের প্রক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া এই যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।বর্তমানে, একটি আংশিক শান্তিচুক্তি / প্রত্যাহার পরিকল্পনা সামনে এসেছে, যেখানে ইসরাইল তার সেনাবাহিনী গাজা থেকে সব অংশে তুলে নেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু “পূর্ণ প্রত্যাহার” হবে কি না, সেই প্রশ্নটা স্পষ্ট নয় .. অনেক বিশ্লেষক বলছেন, কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইসরাইল তার সামরিক উপস্থিতি রাখবে। হ্যাঁ - মার্কিন সরকার একটি নিরীক্ষণ ও সমন্বয় কেন্দ্র গঠন করতে প্রায় ২০০ জন সেনা ইসরায়েলে পাঠাচ্ছে।তবে, তারা গাজা অঞ্চলে প্রবেশ করবে না , তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকবে ইসরায়েলে এবং সেখান থেকে গাজায় শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন তদারকি করবে।
কেন পুরো সেনা প্রত্যাহার বলা হচ্ছে না? নিচে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ:
সুরক্ষা ও কৌশলগত গুরুত্ব
গাজার সীমান্ত, গুরুত্বপূর্ণ নগর এলাকা ও নিয়ন্ত্রণ পয়েন্টগুলো এখনো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে। ইসরাইল চাইবে এমন স্থানে সেনাবাহিনী রাখুক যেখানে ভবিষ্যতে হামলা সম্ভাবনা বেশি।
ধাপে ধাপে প্রত্যাহার পরিকল্পনা
গাজা থেকে একবারে সব সেনা তুলে দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তাই একাধিক ধাপে প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা রয়েছে -প্রথমে একটি নির্দিষ্ট লাইন (যেমন “yellow line”) পর্যন্ত প্রত্যাহার, তারপর ধাপে ধাপে আরও পিছনে সরিয়ে নেওয়া। এই পরিকল্পনায় একটি মহামূল্যবান পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় বাহিনী (International Stabilization Force, ISF) গঠন করার প্রস্তাব রয়েছে, যেখানে মার্কিন ও অন্যান্যদের অংশ থাকবে।
গভীর অবকাঠামো ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
শুধু সেনাবাহিনী সরিয়ে নেওয়া মানেই সেখান নিরাপদ হবে, তা নয় - গাজার অবকাঠামো ধ্বংসপ্রায় অবস্থা, বিস্তীর্ণ ধ্বংস ও শোষণ সমস্যার কারণে নিয়মিত নিরাপত্তা ও পুনর্গঠন প্রয়োজন।অতএব, কিছু পর্যায়ে সামরিক উপস্থিতি রাখা হতে পারে যাতে স্থানীয় শাসন ও পুলিশ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা безопасভাবে সম্ভব হয়।
নিয়ন্ত্রণ পাসপোর্ট ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ
গাজার কোনও আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাস, চেকপয়েন্ট বা সীমান্ত গেট (রাফাহ সীমান্ত, ইজরায়েল-গাজা সীমান্ত) নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলই রাখবে বলে প্রচার রয়েছে। অর্থাৎ গাজা পর্যন্ত বাহ্যিক যাতাযাত নিয়ন্ত্রণ, কন্ট্রোল কী হবে, সে নিয়ন্ত্রণ ইসরাইল থেকে সরানো হবে কিনা - সেটা একটা বড় প্রশ্ন।মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে যে তারা গাজা স্ট্রিপে কোনো সরাসরি পদক্ষেপ করবে না - অর্থাৎ, মার্কিন সেনারা গাজার ভূমিতে প্রবেশ করবে না। তাদের কাজ হবে একটি নিরীক্ষণ ও সমন্বয় কেন্দ্র গঠন করা, যেখানে তারা শান্তিচুক্তির শর্তাবলী বাস্তবায়ন তদারকি ও বিভিন্ন বাহিনী-বহু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দলের সমন্বয় করবে। মার্কিন বাহিনীর সদস্যরা নির্ধারিত পয়েন্টে থেকে যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদান, লগিস্টিক ও পরিকল্পনাগত সহায়তা দেবেন। এছাড়া, তারা ইসরায়েলি বাহিনী ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বয় করবে যাতে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন না হয়।
সুতরাং “মার্কিন সেনা গাজায় প্রবেশ করছে”- হ্যাঁ, এই উক্তিটা মিডিয়ায় হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে তাদের ভূমিকা সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত, গাজা ভূ-ভাগে তারা প্রবেশ করবে না - এটি মার্কিন এবং অন্যান্য সংবাদসূত্রেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ
চুক্তির মান্যতা ও বাস্তবায়ন: শান্তিচুক্তি লঙ্ঘনের আশঙ্কা সব সময় আছে। কোনো পক্ষ চুক্তি মেনে না চললে নতুন সংঘর্ষ শুরু হতে পারে।– হামাসের অস্ত্রবিহীনকরণ ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ: গাজা শাসন কে করবে? হামাস কি রাজনৈতিক ভূমিকায় থাকবে? এসব প্রশ্ন এখনো মীমাংসিত না।– নতুন নিরাপত্তা বাহিনী গঠন: স্থানীয় পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করতে হবে, তা কিভাবে হবে, কার অধীনে হবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে। মানবিক পুনর্গঠন: ধ্বংস হওয়া অবকাঠামো (পানিস্রোত, হাসপাতাল, রাস্তা ইত্যাদি) পুনর্গঠন করতে হবে। সীমান্ত ও পরিবহন নিয়ন্ত্রণ: রাফাহ ও অন্যান্য সীমান্ত গেট চালু করা, লোক ও পণ্য চলাচল স্বাভাবিক করা এসব বিষয় সমাধান করতে হবে।
আজকের আলোচনায় আমরা দেখলাম - গাজা থেকে পুরো সেনা প্রত্যাহার অনিশ্চিত, আর মার্কিন সেনাদল গাজায় প্রবেশ না করলেও একটি সমন্বয় ও নজরদারি ভূমিকায় অংশ নিচ্ছে। শান্তির পথে এই চুক্তি কতটা টেকশই হবে, তা সময়ই বলবে।
আপনারা কী মনে করেন - এই পরিকল্পনা কাজ করবে কি? মন্তব্যে জানিয়ে দিন এবং শেয়ার করুন যেন বেশি মানুষ জানতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন