এই অবিশ্বাস্য ব্রিজ পার হওয়ার অভিজ্ঞতা আপনাকে নিয়ে যাবে আকাশের কিনারায়। মানুষের প্রকৌশল দক্ষতা ও প্রকৃতির সৌন্দর্যের এক অবিশ্বাস্য মিলনস্থল- চীনের এই ব্রিজ যেন মেঘের উপরে গড়া এক স্বপ্নের পথ। জানুন এর নির্মাণ রহস্য, ভয় জাগানো গভীরতা, এবং দারুণ সেই মুহূর্তগুলো যখন আপনি আকাশে ভাসমান এক গাড়ির ভেতরে! এবং জানুন কেন হুয়াজিয়াং ব্রিজকে বলা হয় “Sky Road of China”!
দূর দক্ষিণ চীনের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌ। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পর্বতশ্রেণী, গভীর উপত্যকা আর তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এক অবিশ্বাস্য সৃষ্টি, হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ব্রিজ। এটি শুধু একটি সেতু নয়, এটি মানুষের সাহস, প্রকৌশল আর কল্পনার জয়গান।এই সেতুটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সেতু, যার উচ্চতা প্রায় ৫৬৪ মিটার অর্থাৎ, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৮৫০ ফুট উপরে! ভাবুন তো, একটি সেতুর নিচে তাকালে যদি চোখে পড়ে মেঘের ভেতর হারিয়ে যাওয়া উপত্যকা, তাহলে কেমন লাগবে?
২০১৬ সালে উদ্বোধন হয় এই বিশাল সেতুর। এটি সংযোগ স্থাপন করেছে চীনের দুটো দূরবর্তী অঞ্চল গুইয়াং শহর এবং কুনমিং-এর পথে অবস্থিত ডুয়ুন ও লিউপানশুইয়ের মাঝামাঝি অঞ্চল। আগে এই পথ অতিক্রম করতে সময় লাগত প্রায় দুই ঘন্টা, এখন লাগে মাত্র এক মিনিটেরও কম!সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৩৪১ মিটার। এটি পার হওয়ার সময় মনে হয় আপনি যেন আকাশের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। নিচে তাকালে দেখা যায় গভীর ক্যানিয়নের ভিতর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হুয়াজিয়াং নদী চীনা ভাষায় যার অর্থ, ফুলের নদী।
যখন আপনি এই সেতুতে গাড়ি চালাতে শুরু করবেন, প্রথমেই মনে হবে- এটি যেন কোনো সায়েন্স ফিকশন সিনেমার দৃশ্য! চারপাশে কুয়াশা, নিচে ভয়াবহ গভীরতা, আর সামনে কেবল আকাশের পথ। গাড়ি যত এগোয়, ততই বুঝবেন এটি এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।সেতুটি তৈরি করতে চীনা প্রকৌশলীরা ব্যবহার করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত কেবল-স্টেইড টেকনোলজি। মূল সেতুর দড়িগুলো তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ধাতব সংকর দিয়ে, যা প্রবল বাতাস ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও স্থিতিশীল থাকতে পারে।এই সেতু নির্মাণে প্রায় ১৫০০-এর বেশি শ্রমিক টানা কয়েক বছর কাজ করেছেন। সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল সেতুর দুই প্রান্তের পাহাড়ের মাঝে দড়ি ঝুলানো। এজন্য প্রকৌশলীরা ব্যবহার করেছিলেন ড্রোন এবং রকেট প্রযুক্তি হ্যাঁ, রকেট দিয়ে দড়ি ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে!
আজ এই সেতু শুধু একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি চীনের গর্বের প্রতীক। পর্যটকদের জন্যও এটি এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসে শুধুমাত্র এই সেতুর উপর দিয়ে হাঁটতে বা গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা নিতে। অনেকেই বলেন, নিচে তাকানোর সাহস করতে পারেন না কারণ নিচে যা আছে, তা হলো এক বিশাল গভীরতা ও ভয়াবহ সৌন্দর্য।রাতে যখন সেতুর আলো জ্বলে ওঠে, তখন হুয়াজিয়াং ক্যানিয়ন ব্রিজ রূপ নেয় যেন কোনো জাদুকরি নক্ষত্রপথে। উপরে ঝলমলে আলো, নিচে অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া উপত্যকা, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের প্রযুক্তির এক অসাধারণ মিলন।
যদি কখনো গুইঝৌ প্রদেশে যাওয়ার সুযোগ পান, তাহলে অবশ্যই এই ব্রিজ পার হওয়ার অভিজ্ঞতা নেবেন। এটি কেবল ভয় জয়ের নয়, এটি আত্মবিশ্বাস ও বিস্ময়ের এক যাত্রা।কারণ, হুয়াজিয়াং ব্রিজে দাঁড়িয়ে আপনি শুধু পৃথিবীর গভীরতাকে দেখবেন না, বরং বুঝবেন মানুষ চাইলে আকাশকেও ছুঁতে পারে। এটাই হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ব্রিজ, যেখানে আকাশ ও মাটির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে মানুষের এক অমর সৃষ্টি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন