জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যে পরমাণু বোমা পড়েছিল, তার ধ্বংসযজ্ঞে মুহূর্তের মধ্যে লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়, শহর পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। ইতিহাসের সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলো আজও মানবজাতিকে কাঁপিয়ে তোলে। কিন্তু যদি বলি, বর্তমান সময়ে এমন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি হয়েছে, যা ঐ পরমাণু বোমার চেয়ে ২০০ গুণ বেশি শক্তিশালী, তাহলে কি কল্পনা করা সম্ভব, এর ভয়াবহতা কতটা হতে পারে? একবার চোখ বন্ধ করুন আর ভাবুন তো - আপনি ভাবতে পারবেন না। সম্প্রতি চিনে বিশ্বর বড় তিন নেতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সেখানে শি জিং তার বন্ধু পুতিন আর কিম কে দেখিয়েছেন তার রত্ন ভান্ডার। সেই সাথে বিশ্বকে দিয়েছেন এক মরণ বার্তা। চলুন আজ আমরা জেনে নেই চীনের প্রদর্শিত সেই মারাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে, যার শক্তি পৃথিবীর নিরাপত্তা সমীকরণই বদলে দিতে পারে।
১৯৪৫ সালের আগস্টে আমেরিকা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ফেলে। মাত্র কয়েক কিলোটনের শক্তি ছিল ওই বোমায়। তাতেই প্রায় আড়াই লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। এই ভয়ঙ্কর ইতিহাসের কারণে পরমাণু অস্ত্রকে মানবজাতির জন্য সর্বাধিক ধ্বংসাত্মক বলে ধরা হয়। কিন্তু ৮০ বছর পর বিশ্ব আরো ভয়ংকর অস্ত্রের দিকে এগিয়ে গেছে।
সম্প্রতি চীন প্রকাশ্যে দেখিয়েছে এক নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র, যার নাম DF-41 (Dongfeng-41 Intercontinental Ballistic
Missile)। এটি শুধু সাধারণ ক্ষেপণাস্ত্র নয় এটি একটি
Intercontinental Ballistic Missile (ICBM), যার পরিসর ১২,০০০ থেকে ১৫,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। অর্থাৎ, চীন থেকে ছোড়া হলে পৃথিবীর প্রায় যেকোনো প্রান্তে এটি পৌঁছে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে একসাথে ১০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড। প্রতিটি ওয়ারহেড স্বাধীনভাবে আলাদা আলাদা টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম।
হিরোশিমায় ফেলা বোমার শক্তি ছিল প্রায় ১৫ কিলোটন TNT। কিন্তু DF-41 ক্ষেপণাস্ত্রে বহনযোগ্য একেকটি ওয়ারহেডের শক্তি হতে পারে ৫০০ কিলোটন থেকে ৫ মেগাটন TNT সমপরিমাণ। এর মানে, পুরো ক্ষেপণাস্ত্রের সামগ্রিক ধ্বংসক্ষমতা দাঁড়াচ্ছে হিরোশিমার বোমার চেয়ে ২০০ গুণ বেশি! চীন এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শন করেছে মূলত তাদের শক্তির জানান দেওয়ার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, এমনকি ভারত সবাইকে বোঝাতে চাইছে, চীন আর কোনোভাবে পিছিয়ে নেই। বিশ্বব্যাপী বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিক বার্তাও বহন করছে। তাইওয়ান ইস্যুতে উত্তেজনা, দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধ, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চীন এই অস্ত্রকে প্রতীকীভাবে ব্যবহার করছে।
বিশ্বে বর্তমানে আমেরিকা, রাশিয়া ও চীন এই তিন দেশই সবচেয়ে বড় পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডারের মালিক। কিন্তু চীনের নতুন DF-41 ক্ষেপণাস্ত্র প্রমাণ করেছে, তারা এখন প্রযুক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সমকক্ষ। যদি কখনো এই অস্ত্র ব্যবহৃত হয়, তাহলে শুধু একটি শহর নয় পুরো একটি দেশ মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ পরমাণু যুদ্ধ পৃথিবীর জলবায়ু, পরিবেশ ও মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
চীনের এই প্রদর্শনের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ, এত শক্তিশালী অস্ত্রের উপস্থিতি বিশ্বকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে। একদিকে চীন তার শক্তি বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। এতে করে বিশ্বে নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতা (Arms Race) শুরু হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ হুমকি।
পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা হয় সাধারণত যুদ্ধ প্রতিরোধের জন্য, যাকে বলা হয় Deterrence Theory। অর্থাৎ, শত্রুপক্ষ ভয়ে আক্রমণ করতে সাহস পায় না। কিন্তু একইসাথে, ভুল সিদ্ধান্ত, প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা রাজনৈতিক উত্তেজনায় এই অস্ত্র যদি ব্যবহার হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীর অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।
হিরোশিমা-নাগাসাকির বেদনাময় ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার মানব সভ্যতার জন্য কতটা ভয়ংকর হতে পারে। অথচ আজ সেই অস্ত্রের চেয়ে ২০০ গুণ শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে শক্তি প্রদর্শন করছে চীন।প্রশ্ন হলো মানবজাতি কি আবারও এক ধ্বংসের পথে এগোচ্ছে? নাকি এই শক্তি কেবল ভীতি প্রদর্শনেই সীমাবদ্ধ থাকবে? সময়ের কাছে উত্তর জমা রাখা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।
🔖 ট্যাগ-
#ChinaMissile #DF41
#Dongfeng41 #NuclearWeapons #ICBM #Chineseparade #Hiroshima #WorldWar3
#ChinaVsUSA #GlobalSecurity #NuclearThreat #ChinaMilitary #HistoryAndFuture
#chinanews
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন