প্রতিবাদ জানাতে মানুষ অনেক কিছুই করে। কিন্তু জানেন কি, ইতিহাস জুড়ে ডিম ছোড়া এক ধরনের প্রতিবাদের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম?
আজ আমরা জানবো কেন ডিম ছোড়া হয়, এর পেছনের ইতিহাস কী, আর কীভাবে এটি বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত হলো।
ডিম ছোড়ার ইতিহাস কয়েক শতাব্দী পুরোনো। ইউরোপে মধ্যযুগ থেকেই এটি ব্যবহৃত হতো জনরোষ প্রকাশের উপায় হিসেবে। যাদের বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষুব্ধ হতো শাসক,
অভিজাত বা প্রতারক ব্যবসায়ী তাদের দিকে মানুষ ছুঁড়ে মারত পচা সবজি,
ময়দা আর ডিম। পচা ডিম ছিল সহজলভ্য,
দুর্গন্ধযুক্ত, আর আঘাত করলে পোশাক নষ্ট করত। তাই এটি দ্রুত জনঅসন্তোষ প্রকাশের প্রতীকে পরিণত হয়।
আধুনিক সময়ে ডিম ছোড়া রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। অনেক দেশেই রাজনৈতিক নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধানদের উদ্দেশ্যে ডিম ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। এর উদ্দেশ্য সাধারণত প্রাণঘাতী নয়, বরং অপমানজনক। একজন নেতাকে জনসমক্ষে ডিম মেরে মানুষ বোঝাতে চায়- ‘আমরা তোমার ওপর ক্ষুব্ধ। এর ফলে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়, যা প্রতিবাদকারীর কণ্ঠকে আরও জোরালো করে তোলে।”
বিখ্যাত কিছু উদাহরণও রয়েছে। ১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাজ্যে বহুবার প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে ডিম ছোঁড়া হয়। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডকেও প্রকাশ্যে ডিম মেরে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি সব জায়গাতেই এর ইতিহাস পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও রাজনৈতিক সমাবেশ বা মিছিলে মাঝে মাঝে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ডিম হয়ে উঠেছে প্রতীকী অস্ত্র। ডিম ছোড়ার মধ্যে একটি নাটকীয়তা আছে। এটি প্রাণঘাতী নয়, কিন্তু দৃশ্যমান। ক্যামেরার ফ্ল্যাশে সেই মুহূর্ত ধরা পড়ে, যা পরবর্তীতে গণমাধ্যম আর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। তাই আজকের যুগেও এটি কার্যকর প্রতিবাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি দেখায়, মানুষ যখন অসন্তুষ্ট, তখন তাদের হাতে থাকা সবচেয়ে সহজ জিনিসও হয়ে উঠতে পারে শক্তিশালী প্রতীক।”
তাই বলা যায়, ডিম ছোড়া শুধু দুষ্টুমি নয়, বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি জনরোষ প্রকাশের এক ঐতিহাসিক হাতিয়ার। ডিম ভাঙে, কিন্তু তার সাথে সাথে ভেঙে পড়ে ক্ষমতার অহংকারও। আর সেই কারণেই আজও ডিম ছোড়া একটি জনপ্রিয় প্রতিবাদী ভাষা।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন