ইতিহাস, রাজনীতি আর ধর্মীয় আবেগ- এই তিনটি বিষয় ইরান ও ফিলিস্তিন প্রশ্নকে ঘিরে সবসময় আলোচনায় থাকে। অনেকেই অবাক হন জেনে যে, ইরান আসলে ফিলিস্তিনকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন?
প্রথমেই জানা দরকার, ইরান নিজেকে সবসময় ফিলিস্তিনি জনগণের সবচেয়ে বড় সমর্থক হিসেবে উপস্থাপন করে। বিশেষ করে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরান বারবার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের অবসান এবং ফিলিস্তিনি ভূমিকে মুক্ত করা। কিন্তু এ সমর্থন রাজনৈতিকভাবে নয়, বরং আদর্শিক ও প্রতিরোধভিত্তিক।
আসলে ইরানের নীতি হলো- ইসরায়েল নামক কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেই তারা বৈধ মনে করে না। ইরানের দৃষ্টিতে পুরো ফিলিস্তিন ভূমি দখলকৃত, এবং ইসরায়েলকে মানে মানেই সেই দখলদারিত্বকে বৈধতা দেওয়া। তাই ইরান যদি “ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি” দেয়, তবে সেটা হবে শুধু পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার সীমাবদ্ধ ভূখণ্ডকে রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেওয়া- যা ইরানের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক।
ফলে ইরান আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার পথে হাঁটে না। বরং তারা রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ আন্দোলন, যেমন হামাস বা ইসলামিক জিহাদকে সমর্থন করে। ইরান বিশ্বাস করে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কোনো শান্তি চুক্তি বা জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নয়, বরং প্রতিরোধ ও সংগ্রামের মাধ্যমেই আসবে।
আরেকটি দিক হলো ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ। ইরান যদি আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, তবে সেটা হবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশের নির্ধারিত সীমান্ত অনুযায়ী। এতে ইসরায়েলকে পরোক্ষভাবে মেনে নেওয়ার চাপ তৈরি হবে। ইরান সেটা কোনোভাবেই চায় না।
তবে বাস্তবে ইরান ফিলিস্তিনি জনগণকে রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করে। উদাহরণস্বরূপ, তেহরানে ফিলিস্তিনি দূতাবাস রয়েছে, যেখানে প্রতিনিধি কাজ করেন। আবার ইরানি সংবিধানেও ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আইনি ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টা ইরান এড়িয়ে যায়।
অর্থাৎ, ইরানের মূল অবস্থান হলো- ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মানে শুধুমাত্র পশ্চিম তীর ও গাজা নয়, বরং পুরো ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন ভূমি। আর সেই ভূমি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা রাষ্ট্র স্বীকৃতির পথে হাঁটবে না।
এই কৌশল ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে অন্য মুসলিম দেশের তুলনায় আলাদা করে। অনেক আরব রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও তারা ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কও রাখে। কিন্তু ইরান সরাসরি সংঘাতে বিশ্বাসী—যেখানে ফিলিস্তিন ইসরায়েলের মুখোমুখি লড়াইয়ের প্রতীক।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ইরান রাজনৈতিক কূটনীতির চাইতে আদর্শিক সংগ্রামকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তাই আজও ইরান ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, বরং পুরো ফিলিস্তিন মুক্ত হওয়ার স্বপ্নকেই ধরে রেখেছে।
ইরান সবসময় ফিলিস্তিনের সবচেয়ে বড় সমর্থক দাবি করে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো ইরান এখনো ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। কেন এমন অবস্থান নিয়েছে ইরান? ইসরায়েল বিরোধী নীতি, ভূরাজনীতি ও আদর্শিক কারণে ইরানের এই সিদ্ধান্তের পেছনের গল্প জানুন এই ভিডিওতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন