মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ক্রমেই উত্তেজনাপূর্ণ হচ্ছে। কাতারের পর এখন আলোচনায় তুরস্ক, ইসরায়েলের সঙ্গে এরদোয়ানের সরকারের দ্বন্দ্ব কি নতুন কোনো সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে?
মধ্যপ্রাচ্য সবসময়ই ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। ইসরায়েল, আরব দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি তুরস্ক, সবাই এখানে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি কাতারের ওপর চাপ ও নানা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের পর অনেক বিশ্লেষক এখন প্রশ্ন তুলছেন, তুরস্ক কি ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট হতে যাচ্ছে?
প্রথমে একটু ইতিহাসে যাওয়া যাক। একসময় তুরস্ক ও ইসরায়েলের সম্পর্ক তুলনামূলক ভালো ছিল। ১৯৯০-এর দশকে দুই দেশ সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ায়। কিন্তু ২০০৯ সালের গাজা যুদ্ধের পর সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। বিশেষ করে ২০১০ সালে গাজা ফ্লোটিলা ঘটনার পর, যেখানে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর হামলায় তুরস্কের কয়েকজন নাগরিক নিহত হয়, তখন থেকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে ওঠে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ফিলিস্তিনের সবচেয়ে জোরালো সমর্থকদের একজন। প্রায় প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফোরামে তিনি ইসরায়েলের নীতি ও গাজায় আক্রমণের সমালোচনা করে আসছেন। এর ফলে ইসরায়েল তুরস্ককে একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে।
অন্যদিকে, তুরস্কের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানও ইসরায়েলের জন্য মাথাব্যথার কারণ। তুরস্ক ইউরোপ ও এশিয়ার সেতুবন্ধন, এবং ন্যাটোর সদস্য দেশ। সিরিয়া, ইরাক ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তুরস্কের সক্রিয় ভূমিকা ইসরায়েলের কৌশলগত পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কাতারের পর কেন তুরস্ককে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ভাবা হচ্ছে?
প্রথম কারণ, ফিলিস্তিন ইস্যু। কাতারের মতো তুরস্কও ফিলিস্তিনকে সরাসরি সমর্থন করে। গাজায় হামলার প্রতিবাদে তুরস্ক কূটনৈতিক চাপ তৈরি করে, এমনকি ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাসও করেছে।
দ্বিতীয় কারণ, অর্থনৈতিক ও জ্বালানি প্রতিযোগিতা। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গ্যাস অনুসন্ধান ও রপ্তানির ক্ষেত্রে তুরস্ক ও ইসরায়েলের স্বার্থ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছে।
তৃতীয় কারণ, আঞ্চলিক নেতৃত্ব। এরদোয়ান মুসলিম বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে চান, যা সৌদি আরব ও ইসরায়েল, দুজনের কাছেই অস্বস্তির বিষয়।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ইসরায়েলের সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়ানোর সম্ভাবনা কম। কারণ তুরস্ক শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ও আন্তর্জাতিক মিত্রদের সমর্থন পায়। কিন্তু ইসরায়েল হয়তো কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির মাধ্যমে তুরস্ককে চাপের মধ্যে রাখতে চাইতে পারে।অর্থাৎ, কাতারের পর তুরস্ককে সরাসরি টার্গেট না করলেও, ইসরায়েলের কৌশলগত পরিকল্পনায় তুরস্ক নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। আর এরদোয়ানের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক অবস্থান ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্বকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন