সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে পাকিস্তান ও সৌদি আরবের নতুন এক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি। এই চুক্তিকে ঘিরে শুধু পাকিস্তানের রাজনীতি বা অর্থনীতিই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য নিয়েও নতুন করে শঙ্কায় পড়েছে ভারত। প্রশ্ন উঠছে, আসলে কী ছিল এই চুক্তিতে?
প্রথমেই জানা দরকার, পাকিস্তান ও সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সম্পর্ক শুধু ধর্মীয় বা কূটনৈতিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না থেকে অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি খাতে আরও বিস্তৃত হয়েছে। সর্বশেষ যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে, তাতে মূলত তিনটি বড় দিক সামনে এসেছে।
প্রথমত: অর্থনৈতিক বিনিয়োগ। সৌদি আরব পাকিস্তানের অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে। বিশেষ করে তেল শোধনাগার, বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির খাতে সৌদি আরব বড় অংকের অর্থ ঢালছে। পাকিস্তানের অর্থনীতি যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে সংকটে, এই বিনিয়োগ ইসলামাবাদের জন্য অনেকটা জীবনরক্ষার সমান।
দ্বিতীয়ত: প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। চুক্তির আওতায় পাকিস্তানি সেনাদের জন্য সৌদি আরব প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাবে এবং যৌথ সামরিক মহড়ার সংখ্যা বাড়ানো হবে। এর পাশাপাশি পাকিস্তান থেকে সামরিক পরামর্শক এবং বিশেষ বাহিনী সৌদি আরবে পাঠানো হবে। এ কারণে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, সৌদি আরব ধীরে ধীরে পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতার উপর আরও নির্ভরশীল হয়ে উঠছে।
তৃতীয়ত: কৌশলগত জোট। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে সৌদি আরব শুধু পাকিস্তানকে নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়াতেই তার প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। বিশেষ করে ইরান ও ভারতের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলায় পাকিস্তানকে কৌশলগত মিত্র হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে রিয়াদের।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত কেন ভীত?
ভারত আশঙ্কা করছে, এই চুক্তির ফলে পাকিস্তান নতুন করে অর্থনৈতিক শক্তি ফিরে পাবে এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও আধুনিকায়নের পথে যাবে। সৌদি বিনিয়োগ পাকিস্তানের রিজার্ভ শক্তিশালী করবে, যা দেশটির অস্ত্র কেনার ক্ষমতা বাড়াবে। এছাড়া পাকিস্তান-সৌদি সামরিক সহযোগিতা কাশ্মীর ইস্যুতেও ভারতের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে।
আবারও মনে রাখতে হবে, সৌদি আরব আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি প্রভাবশালী শক্তি, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে। তাদের এই সমর্থন পাকিস্তানের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও মজবুত করবে। ভারতের জন্য এটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের এই নতুন চুক্তি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পাকিস্তান এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও, ভারতকে এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে, কীভাবে এই জোটের প্রভাব মোকাবিলা করা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন