আন্তর্জাতিক রাজনীতির অঙ্গনে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তাঁর কড়া সতর্কবার্তা আফগানিস্তানকে ঘিরে। ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আফগানিস্তান যদি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাগরাম বিমানঘাঁটি ফিরিয়ে না দেয়, তবে "খারাপ কিছু" ঘটতে পারে।
বাগরাম বিমানঘাঁটি আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশে অবস্থিত। একসময় এটি ছিল মার্কিন সেনাদের অন্যতম প্রধান সামরিক ঘাঁটি। ২০০১ সালের আফগানিস্তান যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র এখানে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে। দীর্ঘ দুই দশক ধরে এটি ছিল মার্কিন সেনাদের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, যেখানে যুদ্ধবিমান, গোয়েন্দা সরঞ্জাম থেকে শুরু করে উন্নত সামরিক প্রযুক্তির ব্যবহার হতো। আফগানিস্তান দখলকালে তালেবানবিরোধী যুদ্ধে এই ঘাঁটির ভূমিকা ছিল অমূল্য।কিন্তু ২০২১ সালে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান থেকে হঠাৎ প্রত্যাহার করে নিলে তালেবানের হাতে চলে যায় বাগরাম ঘাঁটি। তখন থেকেই এটি আফগানিস্তানের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনো এই ঘাঁটির গুরুত্ব অস্বীকার করে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাগরাম কেবল আফগানিস্তানের নয়, বরং পুরো মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে সহজেই ইরান, পাকিস্তান, চীন এমনকি রাশিয়ার অনেক অঞ্চল নজরদারিতে রাখা সম্ভব। ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, আফগানিস্তান যদি মার্কিনিদের হাতে বাগরাম ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র নীরব বসে থাকবে না। তিনি বলেছেন, বাগরাম এখন চীনের প্রভাবের আওতায় চলে যাচ্ছে, আর এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি।
তাই যেভাবেই হোক, এই ঘাঁটি আমি ফেরত চাই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্য মূলত চীনবিরোধী কৌশলেরই অংশ। কারণ, আফগানিস্তানে চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে। তালেবান সরকারও চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে, বাগরাম ঘাঁটি ভবিষ্যতে চীনের সামরিক ব্যবহারেও কাজে লাগতে পারে।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বাগরাম তাদের দেশের সম্পদ এবং কোনো বিদেশি শক্তির কাছে এটি হস্তান্তর করা হবে না। তাহলে কি আবার নতুন সংঘাতের ছায়া দেখা দিচ্ছে আফগানিস্তানে? বিশ্বরাজনীতির অঙ্গনে এই প্রশ্ন এখন জোরালোভাবে ঘুরছে। ট্রাম্পের হুমকি বাস্তবে রূপ নিলে তা শুধু আফগানিস্তান নয়, বরং গোটা এশিয়া অঞ্চলের জন্য আবার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
বাগরাম বিমানঘাঁটি নিয়ে এই টানাপোড়েন শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা এখন সময়ই বলে দেবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন