২৯ বছর পর ঘুম ভেঙে জেগে উঠল চিলির লাসকার আগ্নেয়গিরি। শনিবার মধ্যরাত থেকে চিলির আন্দিজ পর্বতমালার এই আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা উদগীরণ হতে শুরু করে। অনর্গল লাভা ও ছাইয়ের উদগীরণ হওয়ায় ওই এলাকায় কিছুক্ষণ পরপর মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে বলেও জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। চিলির ন্যাশনাল জিয়োলজি অ্যান্ড মাইনিং সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, আকাশে প্রায় ছ’হাজার মিটার ( ছ'কিলোমিটার ) উঁচু পর্যন্ত পৌঁছে গেছে ধোঁয়া, গ্যাস এবং লাভার হলকা তাই ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিমানের রুটও। আগ্নেয়গিরি থেকে বিপুল বেগে ছড়িয়ে পড়ছে ধোঁয়া, ছাই ও গলিত লাভা।
![]() |
আগ্নেয়গিরি |
প্রথম দিকে অগ্নুৎপাতের পরিমাণ কম থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়ছে বলেও জানিয়েছে চিলির ওই গবেষণা সংস্থা। লাসকার আগ্নেয়গিরি ঘুম ভাঙায় ওই এলাকায় জারি হয়েছে সতর্কতা। আগ্নেয়গিরির সাত কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে চিলি সরকার। পাশাপাশি আগ্নেয়গিরি সংলগ্ন এলাকা গুলো খালি করা হচ্ছে বলেও জানায় সংবাদ সংস্থা গুলো।
সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই আগ্নেয়গিরি। ১৯৯৩ সালে শেষবার এরকম মারাত্নক অগ্নুৎপাত হয়েছিল লাসকার থেকে। এরপর ২০০৬ ও ২০১৫ সালেও এই আগ্নেয়গিরিটি জেগে ওঠার সংকেত পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু দু’বার সেভাবে লাভা উদগীরণ হয়নি। প্রায় ২৯ বছর পর এই আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠায় তা নিয়ে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে গবেষকদের। আগ্নেয়গিরির মূল কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে তালাব্রে শহরে ঘাঁটি গেড়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে বসেই সর্বক্ষণ চলছে তাদের গভীর পর্যবেক্ষণ। পরবর্তী পর্যায়ে লাভার প্রকৃতি নিয়েও গবেষণা চালাবেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, প্রতি বছর এই ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি দেখতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ চিলিতে এসে ভিড় জমান।
![]() |
মাউন্ট লোয়া আগ্নেয়গিরি |
প্রায় ৩৮ বছর ঘুমন্ত অবস্থায় থাকার পর চিলির লাসকারের মতোই চলতি বছরে জেগে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাউন্ট লোয়া আগ্নেয়গিরি এই আগ্নেয়গিরি থেকে শুরু হয়েছে লাভার উদগীরণ। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে বিছিয়ে থাকা এই আগ্নেয়গিরিটি বিশ্বের বৃহত্তম। ঘুম ভাঙার পর থেকে সমানের দিকে লাভা উদগীরণ করে চলেছে মাউন্ট লোয়া। ১৮৪৩ থেকে গত ১৭৯ বছরে মোট ৩৩ বার চোখ মেলেছে মাউন্ট লোয়ার। ১৯৮৪-র পর দীর্ঘ ৩৮ বছর আর কোনও লাভা উদগীরণ করেনি মাউন্ট লোয়া। ঘুমিয়ে থাকার দিক দিয়ে এটাই এই আগ্নেয়গিরির সর্বোচ্চ সময়।
![]() |
মাউন্ট সুমেরু আগ্নেয়গিরি |
অন্যদিকে চলতি বছরেই ইন্দোনেশিয়ার জাভার মাউন্ট সুমেরুতেও শুরু হয়েছিল অগ্নুৎপাত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই আগ্নেয়গিরির উচ্চতা সাড়ে তিন হাজার মিটারেরও কিছু বেশি। ১৯০৯ সালে ভয়ংকর ভাবে জেগে উঠেছিল আগ্নেয়গিরিটি। তখন এই আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা উদগীরণের জেরে নষ্ট হয়েছিল প্রায় ৮০০ হেক্টর কৃষি জমি। প্রাণ হারান ২৫০ জন মানুষ।
![]() |
আগ্নেয়গিরির ধ্বংসযজ্ঞ |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন