বিশ্বে এই প্রথমবার শীতকালে হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে রঙিন, আসর ফুটবল বিশ্বকাপ। ৩২টি দল অংশ নিচ্ছে এবারের বিশ্বকাপে। কাতার বিশ্বকাপ সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ হিসেবে এর মধ্যেই প্রবল কৌতূহল তৈরি হয়েছে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে দাঁড়িয়েছে এমএসসি ওয়ার্ল্ড ইউরোপা (MSC World Europa) নামের প্রমোদ তরী। এটি একটি বিশাল প্রমোদতরী। অমুসলিম ফুটবলার, ফুটবলারদের স্ত্রী, বান্ধবী কিংবা পরিবারকে ওই প্রমোদতরীতে রাখার বন্দোবস্ত করেছে ইসলামিক কাতার। কাতারের হোটেল গুলোতে ভিন্ন ধর্মী বিদেশী খেলোয়াড় দের সঙ্গে তাদের পরিবার, স্ত্রী বা বান্ধবীদের রাখার বিষয়ে এলার্জি পোষণ থেকেই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কাতার বিশ্বকাপ ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা। তাই বিশ্বে এই প্রথম অন্য রাস্তায় হাঁটছে কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল।
![]() |
এমএসসি ইউরোপা |
এমসি ইউরোপার ভেতরে থাকছে, পাঁচতারা হোটেলের স্বাচ্ছন্দ্যকে হার মানাবে ওই প্রমোদতরী। রেস্তোরাঁ, সেলুন, স্পা, বুটিক হাউস তো থাকছেই। আলাদা অনুমতি আদায় করে পানশালার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আলাদা অনুমতি নিতে নেওয়ার কারণ, কাতারে মদ্যপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বাস্কেটবল কোর্ট, ফুড কোর্ট থেকে প্লে স্টেশন, সবটাই রয়েছে। বিনোদনের যাবতীয় মশলা মজুত থাকবে। সবমিলিয়ে এককথায়, এলাহি কারবার। ফুটবলারদের তোষামোদ করে রাখতে কোনও কার্পণ্য করা হচ্ছে না।
হোক ক্রিকেট বা ফুটবল বিশ্বকাপ। বেশির ভাগ সময়ই খেলোয়াড়দের স্ত্রী-বান্ধবী বা প্রেমিকারা দলবেঁধে ছুটে যান বিশ্বকাপ দেখতে। বিশেষ করে ফুটবল বিশ্বকাপ হলে তো আর কথা-ই নেই। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপেও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না। বিশ্বকাপ দলের ফুটবলারদের স্ত্রী-বান্ধবীরা দলবেঁধে হাজির হচ্ছেন কাতারে। তবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে নয়, কাতারে তারা থাকবেন ভূমী থেকে বিচ্ছিন্ন সমুদ্রের নীল জলে ভাসমান বিলাসবহুল এই প্রমোদতরীতে।
কাতারের সাথে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়ার ভিন্নতাটা তো রয়েছেই, তবে তার চেয়েও বড় ভিন্নতা নারীদের পোশাক আইনে। মেসি, হ্যারি কেন, নেইমার, স্টার্লিং, ফিল ফোডেনদের স্ত্রী বা প্রেমিকারা নিজ দেশে যেভাবে খোলামেলা পোশাকে ঘুরে বেড়ান, কাতারে সেটা প্রকাশ্যে করতে পারবেন না। মুসলিম দেশ হিসেবে কাতারে তাদেরকে মুসলিম নারীদের ড্রেস-কোড মেনে চলতে হবে। অতীতের সব অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার কারণে প্রথমে ফুটবলারদের স্ত্রী-বান্ধবীদের কাতারে আসতে না দেওয়ার কথাই ভেবেছিল কাতার বিশ্বকাপ আয়োজকরা।
এ নিয়ে শুরু হয়েছিলো অনেক মতবিরোধ। অনেকে কাতার কে বিশ্বকাপ ফুটবলের অয়োজক থেকেও সরেযাওয়ার দাবি জানায়। তবে শেষ পর্যন্ত নারীদের আসার অনুমতি দিয়েছে কাতার। তবে ফুটবলারদের স্ত্রী-বান্ধবীদের স্পষ্টই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তারা অবশ্যই কাতারের ড্রেস-কোড মেনে চলতে হবে। নির্দেশমতো তারা কাতারের ড্রেস-কোড অনুযায়ী মুসলিম মেয়েদের পোশাকের আদলে পোষাকও তৈরি করেছেন। অর্থাৎ কাতারে তাদের শরীর ঢাকা থাকবে বোরকা-হিজাবে।
কাতারে আসার অনুমতি পেলেও তারা কোনোভাবেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে থাকতে পারবেন না। কাতারে হ্যারি কেন, রহিম স্টার্লিংরা থাকবেন হোটেল ‘সুক আল ওয়াকরা’তে। আর তাদের স্ত্রী-বান্ধবীরা নিজেদের বাসস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন রাসপ্রাসাদতুল্য প্রমোদতরী। সেটি যে সে কোনো সামুদ্রিক জাহাজ নয়, ঠিক যেন রাজপ্রাসাদ। নাম ‘এমএসসি ওয়ার্ল্ড ইউরোপা’। প্রমোদতরীটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১ হাজার ৪১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বিশ্বকাপ চলাকালে প্রমোদতরীটি কাতারের রাজধানী দোহার সমুদ্রবন্দরের নীল জলরাশিতে নোঙর করা থাকবে। কাতারে আসার অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই প্রমোদতরীটিতে রুম বুকিং দেওয়া শুরু করেছে তারা। সেলুন, বুটিক, রেস্তোরাঁ, বেয়ামাগার, পানসালা, বাচ্চাদের খেলার জন্য বাস্কেটবল কোর্ট, বাম্পার কার, রোলার ডিস্ক থেকে শুরু করে কোন কিছুর অভাব নেই প্রমোদতরীটিতে। তবে কঠিন শর্ত হচ্ছে, কোন মুসলিম ইচ্ছে করলেই অনুমতি ছাড়া সেই প্রমোদতরী ভ্রমণে যেতে পারবেন না।
সুযোগ-সুবিধা, বিলাসিতা যেমন, তেমনি খরচার অঙ্কটাও আকাশচুম্বী। জানা গেছে, প্রমোদতরীটিতে রাতপ্রতি রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬৯০ ব্রিটিশ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৪ হাজার ২৪৮ টাকা থেকে ৭৮ হাজার ৭৭১ টাকা! এ তো গেল রাতপ্রতি সাধারণ রুমের ভাড়ার হিসেব। বিলাসবহুল কেবিন নিতে চাইলে রাতপ্রতি গুণতে হবে ১৯০০ ব্রিটিশ পাউন্ড যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮ টাকা!
পুরো বিশ্বকাপ দেখতে হলে অন্তত মাসখানেক কাতারে থাকতে হবে তাদের। যদি সর্বনিম্ন দামের রুমও ভাড়া নেন, তা হলেও তাদের রমের ভাড়াবাবদ খরচ হবে ১০ লাখ ২৭ হাজার ৪৪০ টাকা! টাকার কথা না ভেবে আরাম আয়েশের জন্য এই প্রমোদতরীটিকেই বেছে নিয়েছেন তারা। ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেনের স্ত্রী কেটি গুডল্যান্ড এরই মধ্যে কাতারে এসে প্রমোদতরীটি দেখে রুম বুকিংও দিয়ে গেছেন।
চলাফেরা, থাকায় আরাম-আয়েশ তো আছেই, বাসস্থান হিসেবে এই উচ্চ ভাড়ার বিলাসী প্রমোদতরীটি বেছে নেওয়ার অন্য একটা বিশেষ কারণও আছে। মুসলিম দেশ হিসেবে কাতারে মদপান এবং খোলামেলা চলাচলে নিষিদ্ধ; কিন্তু সাগরে ভাসমান প্রমোদতরীতে সেই নিষেধাজ্ঞা থাকবে না! প্রমোদতরীর ভেতরে থাকবে না কোন ড্রেস- কোডের বিধিনিষেধ। মানে প্রমোদতরীর ভেতরে অবস্থানকালে নিজেদের ইচ্ছামতো খোলামেলা পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি সব কিছু খেতেও পারবেন! শুধু ফুটবলারদের স্ত্রী-বান্ধবী বা প্রেমিকারাই নন, তাদের অনেকের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যরাও থাকবেন এই প্রমোদতরীটিতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন